ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা, খুশি উপকূলের জেলেরা

বরগুনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০১:০১ পিএম
মাছ ধরার ট্রলার। ছবি : প্রতিনিধি

দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি বরগুনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা। মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সময় মিলিয়ে গভীর বঙ্গোপসাগরে শুরু হচ্ছে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত থেকে শুরু হয় এই নিষেধাজ্ঞা। যা চলবে টানা ৫৮ দিন, শেষ হবে আগামী ১১ জুন।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বাস্তবায়ন ও সহায়তা নিশ্চিত না হলে জেলেরা আবারও গোপনে সমুদ্রে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতো। সেই সময় বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরত বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। এতে নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের জেলেরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ পেতেন না। টলার মালিকসহ জেলেরা হতাশায় দিন কাটাতে হত উপকূলীয় মৎস্য-ব্যবসায়ীদের।

এ অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে সময় সমন্বয়ের দাবি জানিয়ে আসছিলেন জেলেরা ও সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং গবেষণার ভিত্তিতে এবার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ও মেয়াদ উভয়ই পুনর্বিন্যাস করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরবর্তী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

ফিরোজ নামের এক জেলে বলেন, “আমরা খুশি যে, এবার ভারত ও বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সময় এক হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চাল পাইনি। অনেক রিকশাওয়ালাও জেলের নামে চাল পাচ্ছে, অথচ আমরা যারা সত্যিকারের জেলে, তারা বঞ্চিত হচ্ছি। এই দুই মাস কোনো আয় নেই, পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকতে হয়।”

ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “সরকার আমাদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়েছে, আমরা এটা স্বাগত জানাই। কোনো ট্রলার যদি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে যায়, আমরা নিজেরাই প্রশাসনকে জানাব।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য গবেষক বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশাখের শুরুতে বৃষ্টিপাতের সময় অনেক মাছ প্রজননে ব্যস্ত থাকে। তাই এই সময়টায় যদি মাছ ধরা বন্ধ রাখা যায়, তাহলে মাছের উৎপাদন ও ভবিষ্যৎ আহরণে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

ট্রলার মাঝি মো. রাসেল বলেন, “আগে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যেত, আর আমরা নিষেধাজ্ঞা মানতাম। এখন সময় এক হওয়ায় আমরা সমান সুযোগ পাবো। তাই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, “নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। জ্বালানি বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বরফ কল চালাতে অনুমতির প্রয়োজন হবে এবং সাগরে টহল জোরদারে নৌবাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার, যাদের মধ্যে ২৭ হাজারই সমুদ্রগামী। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞা আগে চাল সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক জেলে।”

[113650]

এ বিষয় বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় ভিজিএফের চাল বরাদ্দে কিছুটা দেরি হচ্ছে। বরাদ্দ এলেই দ্রুত সঠিক জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।”