পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় জামিন পাওয়া বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক ল্যান্সনায়েক আলতাফ হোসেন ১৬ বছর কারাভোগের পর বরগুনায় নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে মাসহ পরিবারের ২৬ জন স্বজনকে হারিয়েছেন তিনি। এমনকি মায়ের জানাজায় উপস্থিত থাকতে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলেও মেলেনি অনুমতি। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে মুক্তির পর এখন চাকরি পুনর্বহালের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
আলতাফ হোসেনের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বাওয়ালকার এলাকায়। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে ১৯৯২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি বিডিআরে যোগাদন করেন। পরবর্তী সময়ে সরকারের নির্দেশনায় ২০০৯ সালের ৩ মার্চ বিডিআর ১৩ ব্যাটালিয়নে ল্যান্সনায়েক হিসেবে পিলখানায় যোগদান করেন তিনি। এরপর মর্মান্তিক পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই বছরের ২৩ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই সময় ২ বছর বয়সী এক ছেলে এবং ৪ বছর বয়সী এক মেয়েকে রেখে কারাবন্দি হতে হয় আলতাফ হোসেনকে। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। এর মধ্যে বিভাগীয় মামলায় তার সাত বছরের কারাদণ্ড এবং দায়েরকৃত হত্যা মামলায় তিনি খালাস পান। এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটিতে গত ১৯ জানুয়ারি জামিন পেয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২৩ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
১৬ বছর পর বরগুনায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন আলতাফ হোসেন। তবে কারাবন্দি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে ২৬ জন স্বজনের সঙ্গে ২০২২ সালে মৃত্যু হয় তার মা আমেনা বেগমের। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কারাগারে থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও ভরণপোষণসহ পরিবারের হাল ধরেন আলতাফ হোসেনের স্ত্রী শিরীন সুলতানা।
আলতাফ হোসেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ বছর পর আলতাফ জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফেরায় আনন্দের জোয়ার বইছে বাড়িজুড়ে। দূর-দুরান্ত থেকে স্বজনরা ছুটে এসেছেন তার সঙ্গে দেখা করতে। ১৬ বছর পর স্ত্রী-সন্তানদের কাছে পেয়ে আনন্দের অশ্রুও ঝরছে তার।
ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত স্থানসহ বিভিন্ন স্বজন ও মায়ের কবর দেখতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আলতাফ।