টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকদের রোপন করা ফসলি জমির বালুমাটি অবৈধভাবে কেটে বিক্রির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের গারাবাড়ী এলাকায় সড়কে আগুন ধরিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এতে করে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খরব পেয়ে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরআগে সকালে স্থানীয় বিক্ষোভকারীরা স্কুল মাঠে সমবেত হন। পরে সেখান থেকে এলাকাবাসী গারাবাড়ি এলাকায় ঘাটে গিয়ে বালু উত্তোলনের বেশ কয়েকটি ভেকু (মাটিকাটার যন্ত্র), একটি ড্রাম ট্রাক ও পাইপ ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে পাইপগুলো মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
স্থানীয় একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে সুইট, মোজাম্মেল হোসেন ও যুবদল নেতা টিপুর নেতৃত্বে এই বালুঘাটটি পরিচালনা হতো। তাদের একাধিকবার বাধা দিলেও বালু উত্তোলন বন্ধ করেননি। তারা রাতের আধারে ফসলি জমি কেটে অবাধে বালু বিক্রি করেন।
এছাড়াও ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলার তারাই, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা ও নলিন এলাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যমুনা নদীতে বাঁধ দিয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড ভেঙে গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করে চর কেটে বালু বিক্রি করছে এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব বালুর ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছে।
তারাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রজমান আলীসহ অনেকে বলেন, “যমুনা নদী শুকিয়ে যাওয়ার পর বিএনপি নেতাদের নেতৃত্তে বালু কাটা শুরু হয়েছে। দিন-রাত ভেকু দিয়ে বালু কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। এতে ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে তারা। এছাড়া এভাবে নদীর চর কাটায় পাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
স্থানীয় সিফাত বলেন, “যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে আগামী বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে যাবে। আমাদের জমিও কেটে নিচ্ছে। বাঁধা দিলেই হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় বিএনপির নেতারা জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করছে। প্রশসানের কাছে দাবি, বালু উত্তোলন বন্ধে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি পালন করব।”
এবিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন সুইটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি কিছু বলতে পারব না।”
অপর বিএনপি নেতা মোজাম্মেল বলেন, “স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয় এবং তাদের মানববন্ধন না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও সড়ক অবরোধ এবং ঘাটের ভেকু ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে তারা।”
ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, “সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু ঘাট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা অবরোধ তুলে নেন। বালু উত্তোলনে জড়িতদের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।“
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, “যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়া সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”