গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিদিন জেলার পাঁচ উপজেলাসহ আশপাশের কয়েক হাজার মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। তবে এখানে আসার পর বিপাকে পড়তে হয় রোগ পরীক্ষা নিয়ে। হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় মেশিন থাকার পরও রেডিওলোজি ও ইমেজিং বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম এবং ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফি (ইসিজি) ছাড়া হয় না কোনো রোগের পরীক্ষা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সরেজমিনে হাসপাতালের রেডিওলোজি ও ইমেজিং বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন অসংখ্য রোগীর স্বজন। কেউ সিটিস্ক্যান, কেউ এমআরই, কেউ আবার এসেছেন আলট্রাসোনোগ্রাম ও ইসিজি করাতে।
তবে পরীক্ষা করাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের। বিভাগের ভেতর প্রবেশ করেই দেখা মিলল এক্স-রে পরীক্ষার কক্ষ। ভেতরে বসে আছেন এক্স-রে মেশিন অপারেটর। কাজ না থাকায় বেকার সময় কাটছে তার। একটু সামনে যেতেই দেখা গেল সিটিস্ক্যান ও এমআরআই পরীক্ষা কক্ষ। সেখানে গিয়ে দেখা গেল ভুতুড়ে অবস্থা কক্ষ দুটির।
হাসপাতালে ভর্তি বড় ভাইয়ের এমআরআই পরীক্ষা করতে ছোটাছুটি করছিলেন হালিমা বেগম। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আমার ভাই এই হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার তাকে এমআরআই পরীক্ষা করাতে বলেছেন। হাসপাতালের এই বিভাগে এসে দেখলাম আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি ছাড়া আর কিছু করা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে খুলনা যাব এমআরআই করাতে।”
বিউটি নামের আরেক রোগীর স্বজন বলেন, “আমি এক্স-রের জন্য এসেছিলাম। আমাকে বলছে, ফিল্ম নাই তাই এখানে এক্স-রে হবে না। বাধ্য হয়ে সরকারি মূল্য ২০০ টাকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দিয়ে বাইরে থেকে এক্স-রে পরীক্ষা করাতে হয়েছে।”
এ বিষয়ে হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও বিভাগ ইনচার্জ প্রশান্ত কুমার বাড়ৈ বলেন, “বিভাগটিতে বর্তমান আলট্রাসোনোগ্রাম ও ইসিজি হচ্ছে। বাকি পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না। এমআরআই মেশিন নষ্ট হওয়ার পর নানা জটিলতায় আর তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রোগীর শরীরের ভেতরের কাঠামো ও অঙ্গের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আনা হয় এমআরআই মেশিনটি। এর পরের বছর আনা হয় সিটিস্ক্যান মেশিন। এমআরআই মেশিন চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় রোগীর পরীক্ষা। সিটিস্ক্যান মেশিন কয়েক বছর চালু থাকলেও গত ৫ বছর ধরে সেটিও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে শুধুমাত্র আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষা। তবে কোটি টাকা মূল্যের এসব যন্ত্রপাতি দিনের পর দিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও মেশিনগুলো চালুর তেমন কোনো উদ্যেগ নেই কতৃপক্ষের।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক জিবিতেষ বিশ্বাস সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “১০ বছর ও ৪ বছর ধরে বন্ধ এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন। আর এক্স-রে মেশিনের ফিল্ম না থাকায় চালু করছি না।”
জিবিতেষ বিশ্বাস আরও বলেন, “এমআরআই মেশিন নষ্ট হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটির কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল। তবে ওই কোম্পানি বছরে ৫০ লাখ টাকা চেয়েছে। তাই বাজেট না থাকায় সেটি আর করা হয়নি। আর এখন সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন মেরামতে যে খরচ হবে সেটি দিয়ে আমরা আরও ভালো মেশিন ক্রয় করতে পারব।”
এক্স-রে মেশিনের বিষয়ে তিনি বলেন, “ফ্লিম না থাকায় আমরা মেশিনটি চালু করতে পারছি না। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। যার কারণে নতুন করে ফিল্ম কিনতে পারছি না। এ কারণেই বন্ধ আছে মেশিনটি।”