অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা

নাটোর প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৮:১৫ এএম

নাটোরের বড়াইগ্রামে বৃদ্ধ মা-বাবা ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে উজ্জ্বল কুমার মন্ডল (২৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ।

বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে  বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে মারধরের ঘটনাটি ঘটে। পরে তাকে পুলিশে তুলে দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও আড়ালে চলছে সমালোচনা।

উজ্জ্বল কুমার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মন্ডলের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে তারা আত্মগোপনে ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য উজ্জ্বল বুধবার দুপুরে বাড়িতে ফেরেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা করেন।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আতিকুর রহমান নিজের ফেসবুকে ওই ভিডিও পোস্ট করেন। ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেনের অনুসারী শ্রমিক দলের জালাল ভূঁইয়া, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম, শুভসহ সাত–আটজনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে উজ্জ্বলের বাড়িতে এসে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। উজ্জ্বলের বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারা আবার এগিয়ে এলে তাদের মারধর করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি হামলাকারীদের পা ধরে মারধর বন্ধ করার অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। একপর্যায়ে উজ্জ্বল অচেতন হয়ে গেলে তাকে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হয়।

শেষে বিএনপির নেতারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতে পাঠায়। আদালত ওই দিনই তার জামিন মঞ্জুর করেন।

ভিডিওটি পোস্ট করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, “শুধু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ সবাইকে বেধড়ক পিটিয়েছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।” 

তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিচয় তুলে ধরে লেখেন, “এত কিছুর পরও তাকে পুলিশে তুলে দেওয়া হলো। তাদের পরিবারকে দুর্বৃত্তরা বার বার এলাকাছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।”

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাকে ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন বলে শুনেছেন তিনি।