ভোটার হতে দালালকে বাবা সাজিয়ে নির্বাচন অফিসে দুই রোহিঙ্গা, অতঃপর…

শরীয়তপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ভুয়া জন্মসনদ ও কাগজপত্র দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে এসে এক দালালসহ দুই রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। ভাষা ও কাগজপত্রে গরমিল দেখে সন্দেহ হওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচন অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

আটকরা হলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বালুখালি এলাকার ১১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবুল ফকির আহমেদের ছেলে মো. ইয়াসিন (২১), বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের মৃত সোনা আলীর ছেলে মো. হোসেন (২৮) এবং গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের মধ্য দেওয়ানপাড়া গ্রামের মৃত কালিম উদ্দিনের ছেলে মো. আহসান উল্লাহ (৫৮)।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য ইয়াসিন, মো. হোসেন ও তাদের বাবা পরিচয়ে মো. আহসান উল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সনদ, বিদুৎ বিল, বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে নির্বাচন অফিসে আসেন। এসময় নির্বাচন অফিসারের ইয়াসিন ও মো. হোসেনের ভাষা ও মায়ের ঠিকানা নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করেন। এরপর কাগজপত্রের সত্যতা প্রমাণ না হওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এরপর তারা জানান, ইয়াসিন ২০১৮ সালে মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। অন্যদিকে চার দিন আগে মো. হোসেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রাম থেকে কক্সবাজার আসেন। সোমবার সকালে তারা দুইজনই দালালের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর গ্রামের মো. আহসান উল্লাহর বাড়িতে আসেন। এরপর বিকেলে মো. আহসান উল্লাহকে বাবা সাজিয়ে রোহিঙ্গা যুবক মো. ইয়াসিন ও মো. হোসেন গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচন অফিসে এলে নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্টরা সন্দেহজনকভাবে তাদের তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করে।

এ বিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবু দাউদ বলেন, “আমার এখানে কোদালপুরের একজনকে বাবা সাজিয়ে দুজন রোহিঙ্গা এনআইডি করতে আসে। এদের দুজনের একজন স্পষ্ট বাংলা বলতে পারে আবার চেহারাও বাঙালিদের মতো। কিন্তু আমার সন্দেহ হয় ওনাদের মায়ের বাড়ি চট্টগ্রামে। এরপর তাদের একজন নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ করেছেন, অন্যজন ঢাকা কেরানীগঞ্জ থেকে জন্ম সনদ করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় দুইটা জন্মসনদই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছিল। পরে আমি কোদালপুরের মো. আহসান উল্লাহকে জিজ্ঞেস করি আপনার কয়জন ছেলে মেয়ে। তখন সে জানায় তার পাঁচ ছেলেমেয়ে তবে তাদের নাম বলতে পারছিলেন না। পরে আবার ওই রোহিঙ্গা দুইজনকে ওনাদের ভাই বোনদের নাম জানতে চাইলে তারাও তাদের কথিত ভাইবোনদের নাম বলতে পারছিলেন না। পরে আমরা থানায় জানালে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্যিটা বেরিয়ে আসে। তাই আমরা তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছি।”

গোসাইরহাট থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদ আলম বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার বাদি হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে পুলিশ তদন্ত করছে। আসামিদের আজ কোর্টে প্রেরণ করা হবে।”