মাইনাস নয়, প্লাস টু ফর্মুলা করতে হবে: সারজিস আলম

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

সাধারণ ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না, তা জনগণই নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে আরও কয়েকটি দল দরকার। কারণ দল যত বাড়বে, জবাবদিহিও তত বাড়বে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মাইনাস টু ফর্মুলা বাদ দিয়ে প্লাস টু ফর্মুলা করতে হবে। তাহলেই দেশ দ্রুত এগোবে।’

রোববার (১৭ নভেম্বর) মওলানা ভাসানীর ৪৮তম ওফাত দিবসে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ভাসানীর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস বলেন, “আমরা মনে করি, এই ১০০ দিনে এই সরকারের কাছে যতটুকু আশা করেছিলাম সে অনুযায়ী আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি সত্য, কিন্তু এই ১০০ দিনে সরকারের অবস্থান আরও ভালো হতো, যদি রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে সহযোগিতা করত। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা না ভেবে নিজেদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ যাতে প্রাধান্য পায় সেদিকেই দেখে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন, স্বচ্ছ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দরকার। তাই যথাযথ যৌক্তিক সময় দরকার এই সরকারের। কারণ ছয় মাস এ সরকারের জন্য তেমন কোনো যৌক্তিক সময় হবে না। তেমনি আবার তিন থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদকালও যৌক্তিক হবে না।”

তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা না করে দুই হাজার মানুষ জীবন দিয়েছেন শুধু একটি নির্বাচনের জন্য নয় তাহলে বিগত ১৬ বছরে সব মানুষ একসঙ্গে রাজপথে নেমে যেত। এ মানুষগুলো একসঙ্গে নেমেছে যখন খুনি হাসিনার করাপটেড প্রত্যেকটি সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মানুষ প্রতিটি জায়গায় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। সাধারণ মানুষের সেবা পেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছিল। মানুষকে টাকা দিতে হতো, সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল, তখন সামগ্রিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমেছে। ১৬ বছরে যে সমাধানটি রাজনৈতিকভাবে হওয়ার কথা ছিল, যে খুনি হাসিনার পতন রাজনৈতিকভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেই খুনি হাসিনার পতন হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।  

নতুন রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশে আমার জায়গা থেকে আমি মনে করি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তো ছাত্রদের যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল, তখন আমরা পুরো বাংলাদেশে ছাত্রদের সঙ্গে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, অনেক ক্ষেত্রে হয়েছিলামও। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন শেষ হয়েছে ছাত্র জনতার আন্দোলন দিয়ে। জনতাকে কানেক্ট করা আমাদের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা আমাদের এই অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে তাদেকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, ফ্যাসিস্ট কিংবা ফ্যাসিস্ট দোসররা যে কোনো সময় আবার পাল্টা আঘাত করতে পারে। এই আঘাত মোকাবেলা করার জন্য এই অভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে একটি প্লাটফর্মে এসে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। এই জায়গা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি নাগরিকদের গুছানোর যে কাজটি সে কাজটি পুরো বাংলাদেশব্যাপী করছে। আর এই তরুণ প্রজন্ম যেখানে বিগত সময়ে ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে যেই তরুণ প্রজন্ম ওই খুনি হাসিনার পতন ঘটিয়েছে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করবে  কি না এটা বাংলাদেশের মানুষ নির্ধারণ করবে। কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি যে তাদের একত্রিত হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল থাকা উচিত। যখন বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল দুইটার জায়গায় ৪টা হবে, তখন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করার যে প্রতিযোগিতা সেটি বৃদ্ধি পাবে। একদল আরেকদলকে প্রতিপক্ষ মনে করা নিজেদের মধ্যে নিকোজেশন করা কিংবা ডিল করে একবার এ ক্ষমতায় আসবে, এ ক্ষমতায় আসবে এই চর্চা থেকে বের হয়ে আসার জন্যও আমাদের বাংলাদেশে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ আরও রাজনৈতিক দল দরকার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ এই সমর্থনটি যদি তাদের জায়গায় থেকে জানায় ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবে, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশে আবার নতুন কোনো রাজনৈতিক দল হয়তো খুব দ্রুতই দেখা যাবে।” 

মওলানা ভাসানীকে নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা চিন্তা করলেই প্রথম সারিতেই ভাসানীর কথা চলে আসে। তিনি এ দেশের মাটি ও মানুষের নেতা হতে পেরেছিলেন। কারণ তিনি সব মানুষের সঙ্গে মেশার জন্য লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরতেন। তিনি ছিলেন ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের সঙ্গে কোনো দিনও আপস করেননি।

মাজার জিয়ারতের সময় তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার, স্থানীয় সমন্বয়ক মো. আল আমিন, সিয়াম, মনিরুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম।