ছেলের পরকীয়া-মাদকাসক্তিতে বাধা, মাকে হত্যা করে ফ্রিজে লাশ

বগুড়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জয়পুরপাড়া এলাকায় মা উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) হত্যা করেছেন ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯)। পরে ঘটনাটি ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজানোর জন্য আলমারিতে কুড়াল দিয়ে কোপ মারেন এবং বাসার গেইটে তালা দিয়ে পালিয়ে যান।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে ঘাতক ছেলের বরাত দিয়ে র‌্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ১২টার দিকে কাহালু উপজেলার পাঁচ পীর আড়োবাড়ী এলাকা থেকে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিহত সালমা খাতুন দুপচাঁচিয়ার দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসা ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমানের স্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার জানান, রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে বাড়ির ডিপ ফ্রিজের ভেতর উম্মে সালমা খাতুনের মরদেহ পাওয়া যায়। পরে এই হত্যার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে র‌্যাব। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে হত্যাকাণ্ডের আনুমানিক সময় মা ও ছেলের অবস্থান একই জায়গায় ছিল। আবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ওই দিন নিহতের ছেলে ছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাদ বিন হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলে জানান র‌্যাব কমান্ডার। তিনি বলেন, সাদ বিন আজিজুর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল। আর সম্ভবত জুয়া খেলায় তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ জন্য সে টাকা নিয়ে প্রতিদিন বাড়িতে ঝগড়া করত মায়ের সঙ্গে।

নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে র‌্যাব জানতে পারে, উম্মে সালমা খাতুনের সঙ্গে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানের হাত খরচের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া বিবাদ চলেছিল এবং বাসা থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০-১০০০ টাকা হারিয়ে যেত। ঘটনার দিন সকালে মায়ের সঙ্গে হাত খরচের টাকা নিয়ে কথার কাটাকাটি হয় সাদের। পরে তিনি রাগ করে সকালের নাস্তা না খেয়ে মাদ্রাসায় চলে যান।

হত্যার দিনের ঘটনার বর্ণনায় র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাদ্রাসায় ক্লাসের বিরতির সময় বাসার প্রবেশ করে সাদ তার মাকে তরকারি কাটতে দেখেন। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার মায়ের পেছন দিক থেকে নাক-মুখ চেপে ধরে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মা বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে ভিকটিমের হাতের তর্জনী আঙ্গুলের নিচে তরকারি কাটার বটি লেগে হালকা কেটে যায়। পরে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান সালমা।

এরপর দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজের ভেতর রেখে দেওয়া হয় মাকে। ঘটনাটি ডাকাতি হিসেবে সাজানোর জন্য সাদ বাসায় থাকা কুড়াল দিয়ে তার বাবা এবং মায়ের বেডরুমে থাকা আলমারিতে কয়েকটি কোপ মেরে কুড়াল সেখানে রেখে বাসার মেইন গেইটে তালা দিয়ে বের হয়ে যায়।

স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, মাদ্রাসাছাত্র সাদ বিন আজিজুর রহমান মাদকসাক্ত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন।