লক্ষ্যে পৌঁছাতে মানুষ কত কিছুই-না করে। আইনজীবীর সহকারী হতে তিনি ৫০ পেরিয়ে পাস করেন এসএসসি। এরপর এইচএসসি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কামাত গ্রামের আবদুল হান্নান ৫৬ বছর বয়সে চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি শিবগঞ্জের ধাইনগর কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে জিপিএ-৩.৯২ পেয়েছেন।
এই কলেজের অধ্যক্ষ মো. সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবদুল হান্নানের এলাকায় আমার বাড়ি। আমি তাকে বড় ভাই ডাকি। আর্থিক অবস্থা ভালো না। তবুও এই বয়সে লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ। তিনি আরও পড়তে চান।’
এই বয়সে এসে লেখাপড়ার কারণ সম্পর্কে আবদুল হান্নান বলেন, একজন আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কিছুদিন পর তাতে বাদ সাধেন বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার নেতারা। তারা বলেন, সমিতির সদস্য হওয়া ছাড়া এখানে কাজ করা যাবে না। আর সদস্য হতে হলে এসএসসি পাস হতে হবে। তখন এসএসসি পাস করে সদস্য হওয়ার জেদ চাপে তাঁর মনে। ৫৩ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পাস করেন। সদস্য হওয়ার জন্য এসে জানতে পারেন, নিয়ম বদলে গেছে। সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য এইচএসসি পাস হতে হবে।
এতে দমে যাননি, বরং উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে ধাইনগর কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজে ভর্তি হন আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, সহপাঠীরা প্রথমে ঠাট্টা-মশকরা করতেন। তখন খারাপ লাগত। পরে আস্তে আস্তে সহপাঠীদের সঙ্গে খাতির হয়ে যায় তার। তাদের সঙ্গে নানা গল্পে-আনন্দে কলেজজীবন ভালোভাবেই কাটিয়েছেন।
যে কারণে এই বয়সে এইচএসসি পাস করলেন, সেখানে সুখবর নেই আবদুল হান্নানের জন্য। সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ৩৬ বছরের বেশি বয়সী কাউকে আর সদস্য করা যায় না। মন খারাপ হলেও হান্নান এখন ভাবছেন, আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে আইনজীবী হবেন। এবার তাকে আবারও লড়াই করতে হবে।
আবদুল হান্নানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। এর মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। হান্নানের স্ত্রী রুমেলা বেগম বলেন, প্রথম দিকে স্বামীর লেখাপড়ার ঝোঁক দেখে পাগলামি মনে হতো। তিনি বিরক্ত হতেন। পরে তার সাফল্যে অনেক আনন্দ পেয়েছেন।