লালন শাহ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ বৈষম্যবিরোধী ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। 

উপদেষ্টা বলেন, তিনি (লালন) ১৩৪ বছর আগেই সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। ‘জাত গেল জাত গেল বলে, এ কি আজব কারখানা’ গান গেয়েছেন। ‘সব লোকে কই লালন কি জাত সংসারে’ গান গেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ছেউড়িয়ার লালন আখড়াতে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ১৩৪তম তিরোধান দিবসে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

উপদেষ্টা আরো বলেন, “ফকির লালন সম্রাট ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাধক। তার বাণী সমাজের সকল ক্ষেত্রে বিদ্যমান। আমরা যদি লালনকে ভালবাসি, তাহলে নারীর ওপর অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন করতে পারি না। কৃষিকাজে বিষ দিয়ে, নদীতে বিষ দিয়ে মাছ মারতে পারি না।”

লালন একাডেমির প্রতি লালন শাহ’র সকল বাণী সংরক্ষণ ও গবেষণারও দাবি জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার যদি ঠিকঠাক কাজ করতে না পারে, আপনারা শুধরে দেবেন, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন। এই যে ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর আমরা যে সরকার গঠন করেছি, দায়িত্ব পেয়েছি, তা দায়সারা হতে পারে না।”

উপদেষ্টা বলেন, “লালন শুধু গান গাওয়ার বিষয় না, শুধু ভক্তির ব্যাপারও না, সবার জন্য লালন একটা জীবন ব্যবস্থা। লালন আমাদের শিখিয়েছেন, কিভাবে প্রকাশ করতে হয় যে, আমি কিছু না।”

তিনি বলেন, “লালন শুধু কুষ্টিয়ার নয়, লালন সারা বাংলাদেশের, লালন সারা বিশ্বের।”

এর আগে, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র এই আধ্যাত্মিক বাণী সামনে রেখে ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে মৎস ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উৎসবের উদ্বোধন করেন।

সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি লালনের তিরোধান দিবস অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন, অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, বিশিষ্ট কবি, দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী ফরহাদ মজহার, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান।

কালী নদীর তীরে বিশাল মাঠে গ্রামীণ মেলায় শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসেছে। গান শোনার ফাঁকে সেখানে মানুষ কেনাকাটা করছেন। প্রবেশপথ, আখড়াবাড়ি (বারামখানা) ও মেলার মাঠ চত্বর কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। লালন সাধু-ভক্তদের পদচারণয় মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময় ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবসের সাধুসঙ্গ।

বয়োজ্যেষ্ঠ হৃদয় সাধুর ভাষ্য, লালন শাহের প্রতি প্রেম-ভালবাসার টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে এসেছেন। তাদের পদচারণয় মুখরিত আখড়াবাড়ি মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

সাধু-ভক্তরা বলছেন, এবছর উৎসব শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। শুরুর দিনে পা ফেলার জায়গা ছিল না। মায়ার টানে, আত্মার টানে ভক্তরা ছুটে আসছেন ধামে।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক লালন সাঁই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এর পর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তার ভক্ত-অনুসারীরা সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। লালন একাডেমি প্রতিবছর ছেঁউড়িয়ায় একাডেমি চত্বরে দুবার লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে।