বেনাপোল বন্দর সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোভাবে জ্বালানি তেল ডিজেল পাচার না হয়, সেদিকে নজরদারি ও তৎপরতা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় ট্রাকের তেলের পরিমাণ এন্ট্রি করা হচ্ছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তেমন কোনো নজরদারি চোখে পড়েনি। বিজিবির এমন পদক্ষেপ সাধুবাদ জানিয়েছেন বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো।
বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালক আলামিন বলেন, “তেল পাচাররোধে আগে থেকেই বিজিবি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি ভালো উদ্যেগ। ভারতে তেলের দাম বেশি, বাংলাদেশে কম। লোভে পড়ে তেল পাচার হতে পারে। অনেক ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল বন্দরের বাইরে গিয়ে পণ্য খালাস করে। সেখানে বন্দরের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। তেল পাচাররোধ করতে হলে বন্দরের বাইরে পণ্য খালাস বন্ধ করতে হবে।”
ভারতীয় ট্রাক চালক বিকাশ জানান, তিনি এর আগে বাংলাদেশে আমদানি পণ্য নিয়ে আসতেন। তখন ট্রাকের তেল মাপা হতো না। এখন বিজিবি সদস্যরা আসার সময় স্কেল দিয়ে তেল পরিমাপ করছে, আবার ফেরার সময়ও তেলের পরিমাণ দেখাতে বলেছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, “সরকার বিদেশ থেকে বেশি মূল্যে তেল কিনে ভুর্তকি দিয়ে দেশে সরবরাহ করছে। আর এ তেল যদি বাইরে পাচার হয় তবে ক্ষতিকর। তবে পাচার প্রতিরোধে আগে থেকে বন্দর এলাকায় বিজিবি’র নানা সর্তকতা ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। এমন পদক্ষেপের জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে বিজিবির পাশাপাশি বন্দরসহ অন্য প্রশাসনিক সংস্থাগুলো যদি নজরদারি বাড়ায় তবে তেল পাচারের কোনো সুযোগ থাকবে না।”
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক(ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, তেল পাচার প্রতিরোধে ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের সাথে সাথে বিজিবি সদস্যরা তেলের পরিমাণ এন্ট্রি করছেন। বিজিবির পাশাপাশি বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরাও সতর্ক রাখা হয়েছে।
যশোর-৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অদিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম রেজা জানান, সীমান্ত পথে সব ধরনের চোরাচালান ও পাচাররোধে বিজিবি আন্তরিক ও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছে। জ্বালানি তেল ডিজেল বেনাপোল সীমান্ত পথে পাচারের সুযোগ দেখি না। তারপরেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসাবে দেশের এ সম্পদ জ্বালানি তেল যাতে কোনোভাবে পাচার না হয় আগে থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে ঢোকা ও বাহির হওয়ার আগে তেলের পরিমাণ এন্ট্রি করা হচ্ছে। এতে ট্রাকের মাধ্যমে পাচারের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, এক মাস আগে ভারতে ডিজেলের মূল্য ছিল প্রতি লিটার ১০২ রুপি। গত ৩ নভেম্বর দাম কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯১ রুপিতে। অপর দিকে বাংলাদেশে ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৬৫.২৫ টাকা। গত ৪ নভেম্বর লিটারে ১৫ টাকা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে লিটার ৮০.২৬ টাকা। বর্তমানে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ডিজেলের দাম লিটারে ১১ রুপি কম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ টাকা। এতে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।
সরকার এত দিন বিদেশ থেকে বেশি দামে তেল কিনে কম দামে ভুর্তকি দিয়ে তেল বিক্রি করছিল। এতে লোকসান কমাতে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।