জিপিএ ৫ পেয়েছেন ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু রায়হান

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ০৭:৪৬ পিএম

স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবে আবু রায়হান। সেভাবে তাকে ছোট বেলা থেকে গড়ে তুলেছে পরিবার। প্রাথমকি থেকে প্রথম স্থান অধিকারী রায়হান দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। সদ্য প্রকাশিত আলীম পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন আবু রায়হান। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ছুঁতে পারল না তার পরিবার। কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেও অধরা রয়ে গেল তাদের স্বপ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ঘাতকদের অগ্নিসংযোগে নিহত হন আবু রায়হান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফজলে আলম ও রেহেনা বেগম
দম্পতির সন্তান আবু রায়হান। বাড়ির পাশে স্কুল থেকে প্রাথমিক শেষ করে উত্তর হরিহরপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ -৫ ও আলীমে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রায়হান। মেধাবী আবু রায়হান ছিল পরিবারের এক মাত্র বাতিঘর।

শুধুমাত্র পরিবারের বাতিঘর ছিলেন না আবু রায়হান। আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে সম্ভাবনার আরেক নাম ছিল এ মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের ফলাফলে তাকে নিয়ে গর্ব করতেন প্রতিবেশীরা।

এর আগে সন্তানের ফলাফলের কৃতিত্বে মিষ্টি মুখে মুখরিত ছিল পরিবার ও প্রতিবেশীরা। এবারের ফলাফলে সন্তানের স্মৃতি দেখে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন পরিবারের সদস্য, স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবুও শহীদ সন্তানের বাবা-মা পরিচয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করেন ছেলের অনুপস্থিতি। সন্তানের জীবনের বিনিময়ে হলেও আর কোনো প্রাণহানি ও বৈষম্য চান না রায়হানের বাবা-মা।

প্রতিবেশি শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমার থেকে দু-বছরে ছোট হলেও বেড়ে ওঠা আমাদের একসঙ্গে। তার মতো মেধাবী ও ভদ্র ছেলে গ্রামে খুব কম রয়েছে। তাকে নিয়ে সবার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে। আজকের ফলাফলে সে থাকলে অনেক খুশি হতো।”

আরেক প্রতিবেশী জাহেদা খাতুন বলেন, “এলাকার ভাতিজা হয় রায়হান। তার মেধা দেখে সবাই তাকে ডাক্তার বলে ডাকতাম। সে বেঁচে থাকলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতো। আমরা একজন এলাকার গর্বিত ডাক্তার পেতাম।”

শহীদ আবু রায়হানের মা রেহেনা বেগম বলেন, “আমার সন্তানকে নিয়ে কেউ কটু মন্তব্য করতে পারবে না। সে অনেক ভদ্র ও ভালো ছিল। আমাকে বলত মা তোমার স্বপ্ন পূরণ করব ডাক্তার হয়ে। আমার ছেলে তো জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর তো কোনো ছেলে নেই আমার। কে স্বপ্ন পূরণ করব এখন। কী হবে আমার পরিবারের।”

আবু রায়হানের বাবা ফজলে আলম রাশেদ বলেন, “আজকের আনন্দের দিনে এতটুকু ভেবে আনন্দ লাগছে যে, দেশের জন্য আমার মেধাবী সন্তান শহীদ হয়েছে। আমি একজন গর্বিত শহীদের বাবা। তাকে একজন মানবিক চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে তার রেখে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ আবার নতুন করে সাজবে এই প্রত্যাশা।”