ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধে মাছ ধরা উৎসব

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ০১:১৯ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ের শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় জাল, পলো এবং ছোট ছোট ছিপ নিয়ে উৎসবের আমেজে মাছ ধরতে এসেছে হাজার হাজার মানুষ। খেওয়া জাল, পলো আর মাছ রাখার পাত্র খলই নিয়ে ভোর থেকেই এই এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন তারা। 

প্রতিবছরই শীতের শুরুতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার পর এভাবে মাছ ধরা চলে। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় চলছে মাছ ধরার এক প্রতিযোগিতা। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা। জানা যায়, এই জলকপাটে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করে থাকে।

তবে এবার মাছ ধরতে আসা সবার অভিযোগ, মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না কেউ। দেশীয় প্রজাতির মাছ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর আগেও এই বাধে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু এখন মাছ নেই। কারেন্ট জাল, রিং জালের কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে মনে করেন মাছ ধরতে আসা সকলেই।

অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ ক্রয় করতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করেন, মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তো পাওয়া যায় নাম এখানে যাও পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু দাম অনেক। পুঁটি মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ ক্রয় করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এ বাঁধটি। 

সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে বাঁধের গেট ছাড়ার পর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারাদিন ধরে মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষরাই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারো হাতে খেওয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকেই কোনও সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।

এই উৎসবে আবার কেবল মাছ ধরতেই সবাই ব্যস্ত নেই, কেউ কেউ ব্যস্ত হয়েছেন অন্য কাজেও। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

ঠাকুরগাঁও শহরের রহিম উদ্দিন বলেন, “প্রতিবার আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে গত দুই বছর থেকে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন দেশীয় মাছের হাহাকার।”

মাছ ধরতে আসা জেলেরা জানান, জলকপাট আগামী কয়েকদিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এই কয়েক দিন। তবে প্রথম দিনেই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত ২/৩ বছর থেকে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই। তাই শখের বসে আমরা মাছ ধরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মামুনুর রশীদ বলেন, “আমি ভোর সকালে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবার শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর সকাল থেকে নয়টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুটি, টেংনা সহ অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। এতক্ষন থেকে যেভাবে খাটনি হয়েছে সেই অনুপাতে মাছ পাওয়া যায় নাই।”

শহর থেকে মাছ ক্রয় করতে যাওয়া সারোয়ার হোসেন বলেন, “দেশীয় প্রজাতির মাছ বাসায় পছন্দ করে। তাই টাটকা মাছ ক্রয় করার জন্য এখানে সকালেই চলে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি মাছ তেমন নেই। আর যা অল্প মাছ উঠেছে তাও আবার দাম অনেক বেশি। দেখি অল্প কিছু মাছ নিয়ে চলে যেতে হবে।”

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পরে এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। যারা এখানে মাছ ধরতে আসেন। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের যে চাহিদা সেটি পূরণ হবে।