গোপন ভিডিও না দেখালে বক্তব্য দেবেন না তিনি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১২:৩০ পিএম

কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কোনো ফাইলই যেন নড়ে না ঘুষ ছাড়া। সীমাহীন ভোগান্তি ও দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে সেখানে সেবা নিতে যাওয়া গ্রাহকদের কাছে। এসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত অফিসটির সহকারী পরিচালক আইরিন পারভিন ডালিয়া। এমনকি অফিস ভবনের তৃতীয় তলাতেই তিনি সংসার পেতেছেন বলে জানা গেছে।

উপরি টাকা পেলেই ‘ম্যানেজড’ হন অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে সহকারী পরিচালক পর্যন্ত সবাই। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে গ্রাহকদের নিয়মিতই গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সেখানের পিয়ন থেকে শুরু করে সহকারী পরিচালক, সবাই জড়িত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না সেখানে। এতে করে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা মানুষরা।

অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা জেলার এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের। পুরাতন কার্যালয় থেকে নতুন কার্যালয়ে স্থানান্তরিত হলেও বিন্দুমাত্র ভোগান্তি কমেনি সেবাগ্রহীতাদের।

অফিসের সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি জেলাটির পাসপোর্ট-প্রত্যাশীরা। পিয়ন থেকে শুরু করে প্রধান কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাইকে নানা অজুহাতে দিতে হয় ঘুষ। না দিলে পোহাতে হয় অন্তহীন ভোগান্তি। এর জন্য আবার ব্যবহার করা হয় স্থানীয় দালালদের। সবমিলে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন ঘুষ-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পাসপোর্ট করতে গেলে বিভিন্নভাবে টাকা চেয়ে বসেন অফিসের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। সবাই যেন ‘ম্যানেজড’।

জানা গেছে, ভাড়া বাড়ি থেকে সরে শহরতলীর কাটাবাড়িয়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বড় পরিসরে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। সেখানে পাসপোর্ট করতে গিয়ে রীতিমতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।

সবচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ আছে পাসপোর্ট অফিসটির সহকারী পরিচালক আইরিন পারভিন ডালিয়ার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সোমবার (৭ অক্টোবর) তার বক্তব্য নিতে যাওয়া হয়। এদিন বেলা ১২টার দিকে গিয়ে তার রুম বন্ধ পাওয়া যায়। দায়িত্বরত অফিস সহকারীর কাছে তার খোঁজ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম ভবনটির তৃতীয় তলায় বাসায় আছেন।’

তিনি কখন আসবেন জানতে চাইলে ওই কর্মচারী সহকারী পরিচালককে ফোন দিয়ে বলেন যে সাংবাদিকরা এসেছেন। উত্তরে তিনি জানতে চান সাংবাদিকরা কেন এসেছেন। তার একটি বক্তব্য নেওয়ার কথা জানানো হয় তাকে। পরে তিনি সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে এদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অফিস কক্ষে আসেন এই কর্মকর্তা।

ওনার অফিসের আনসার সদস্যরা টাকা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। উলটো অফিসের স্টাফদের দিয়ে সাংবাদিকদের বের করে দেন। একপর্যায়ে বায়োমেট্রিক রুম থেকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হেদায়েতুল্লাহ ডেকে এনে বক্তব্য নিতে যাওয়া উপস্থিত সাংবাদিকদের ভিডিও করে রাখেন তিনি।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, গোপন ভিডিওসহ সব তথ্য না দেখালে উনি কোনো বক্তব্যই দেবেন না। যা মন চায় তাই করতে বলেন সাংবাদিকদের।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জের সবকটি উপজেলার মানুষ পাসপোর্ট করতে এখানে আসেন। এর মধ্যে ভৈরব, কুলিয়ারচর, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর,কটিয়াদী তাড়াইল-এই উপজেলাগুলোর দূরত্ব প্রায় ২৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার। এ অফিসে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ বা তারও বেশি আবেদন জমা হয়। পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের অভিযোগ দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিলে বিভিন্ন রকমের হয়রানির শিকার হতে হয়।